ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের সাম্প্রতিক ওয়াকফ আইন নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এবার এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক এবং সংস্কৃতি ও আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
গত রবিবার (৬ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসে তিনি নতুন এই আইনের কঠোর সমালোচনা করেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, মোদি সরকার মুসলমানদের বিরুদ্ধে আরও একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী, ভারতের ওয়াকফ বোর্ড—যা মুসলমানদের ধর্মীয় ও দাতব্য সম্পত্তি পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত—তাতে অমুসলিমদেরও অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া এই আইনের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তিতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপেরও বিধান রাখা হয়েছে।
ড. নজরুল আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই আইনের অপব্যবহার করে ভারতের বহু পুরনো মসজিদসহ মুসলিম ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “ভারতে তো হিন্দু মন্দির পরিচালনা কমিটিতে অমুসলিমদের স্থান নেই। তাহলে ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমদের রাখার যৌক্তিকতা কী?”
তিনি আরও মন্তব্য করেন, এই আইন ভারতের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিনের বৈষম্য ও নিপীড়নের ধারাবাহিক অংশ। এটি দেশটিতে সংখ্যালঘুদের অধিকারের ওপর আরেকটি আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এই একই গোষ্ঠী আবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ভুয়া অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক মহলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।”
উল্লেখ্য, ওয়াকফ বলতে বোঝায় মুসলমানদের দানকৃত স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি, যা ধর্মীয় বা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহারের জন্য স্থায়ীভাবে নিবেদিত। ভারতের সংশোধিত ওয়াকফ আইনে প্রথমবারের মতো অমুসলিমদেরও বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ রাখা হয়েছে, একইসঙ্গে সরকারের ভূমিকা আরও প্রভাবশালী করা হয়েছে।