দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কারের দাবি জানিয়ে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে না। তিনি বলেন, অতীতে যেসব নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে হয়েছে, সেখানে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে এবং এর মাধ্যমে জনমতের যথাযথ প্রতিফলন হয়নি। তাই শুধু ইভিএম বাদ দেওয়াই যথেষ্ট নয়, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীতে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি আরও বলেন, “ইভিএম ব্যবহার করে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত। শুধু প্রযুক্তির অপব্যবহার নয়, নির্বাচন কমিশন অতীতে যে অন্যায় ও গাফিলতি করেছে, সেসব বিষয়েও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। নয়তো অন্যায়কারীরা ভবিষ্যতেও এই ধরনের কাজ করতে আরও বেশি উৎসাহিত হবে।”
তিনি জানান, নির্বাচনকে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন হিসেবে গড়ে তুলতে হলে গণতান্ত্রিক কাঠামোতে ফেরার কোনো বিকল্প নেই। স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
না ভোট ও জবাবদিহির দাবি
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য ‘না’ ভোটের বিধান চালু করা প্রয়োজন। এতে ভোটাররা যেকোনো প্রার্থীকে অনুপযুক্ত মনে করলে সেই অবস্থান স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারবেন। এ প্রক্রিয়া প্রার্থীদের ওপর চাপ তৈরি করবে, যাতে তারা জনগণের জন্য আরও দায়িত্বশীল হতে বাধ্য হন।
এক দিনের মধ্যে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব: ড. তোফায়েল আহমেদ
এ সময় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন বিভিন্ন সময়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে হয়, যা প্রশাসনিকভাবে ব্যয়বহুল এবং জনমতকে বিভ্রান্ত করে। কিন্তু যদি স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত আইনগুলো সমন্বিত করা যায় এবং একীভূত কাঠামো তৈরি করা হয়, তাহলে একটি নির্দিষ্ট তফসিলে এক দিনেই স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যদি সংসদীয় কাঠামোর মতো একটি নির্দিষ্ট নির্বাচন শিডিউল নির্ধারণ করা হয়, তাহলে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা যেমন বাড়বে, তেমনি ব্যয় ও জটিলতাও কমবে। এতে করে দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় এক ধরনের শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।”
নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে চলমান আলোচনা
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক মহল, বেসরকারি সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে ইভিএম, ভোট গ্রহণে স্বচ্ছতা, ভোটার তালিকা হালনাগাদে অনিয়ম, এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একটি কার্যকর ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য নির্বাচন ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা, জবাবদিহি এবং সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্যতা অপরিহার্য। গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এই তিনটি মৌলিক বিষয়ের উপরেই জোর দেন।