শিক্ষা বাজেটে বৈষম্য রোধ ও কার্যকর বরাদ্দের উপর জোর বিশেষজ্ঞদের
বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য মাথাপিছু বাজেট মাত্র ১৩৬ ডলার, যা টাকায় প্রায় ১৬ হাজার ৫৯২। অথচ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শিক্ষাখাতে ব্যয়ের দিক থেকে নিচের দিকে থাকা ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম। এই চিত্রকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু বাজেট ২০০ ডলারে উন্নীত করা জরুরি, অর্থাৎ প্রায় ২৪ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় বাড়াতে হবে।
সোমবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গণসাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশন ওয়াচ আয়োজিত ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশের প্রত্যাশায় শিক্ষা বাজেট: আমাদের প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী এবং প্রাক-বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা পরামর্শ কমিটির আহ্বায়ক ড. মনজুর আহমদ।
ড. মোয়াজ্জেম বলেন, “সরকারকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি শিক্ষা বাজেট ঘোষণা করতে হবে। বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে তা যথাযথভাবে ব্যয় হচ্ছে কি না।” তিনি আরও বলেন, “স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের বাজেট বরাদ্দ তো থাকছে, কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থ সময়মতো ব্যয় করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বাজেটের সবচেয়ে দুর্বল অংশগুলোর মধ্যে এই দুই খাতই রয়েছে।”
নারী শিক্ষার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “এবারের বাজেটে নারী শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বাজেটে নারীর প্রতি কোনো ধরনের বৈষম্য যেন না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
ড. মোয়াজ্জেম আরও বলেন, “বর্তমানে শিক্ষার সঙ্গে কর্মসংস্থানের যোগসূত্র অত্যন্ত দুর্বল। একজন শিক্ষার্থী যত বেশি পড়াশোনা করছে, বেকার হওয়ার আশঙ্কাও তত বেশি। ছেলেদের ক্ষেত্রে এই হার ১.১৯ শতাংশ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১.০৭ শতাংশ। পাশাপাশি ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনো কম্পিউটার শিক্ষার বাইরে রয়েছে।”
শিক্ষাক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়ার জন্য নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, “বিশ্বে গণিত ও বিজ্ঞানে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়? এখনো কেন শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়নি? বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে সামাজিক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে, তাই একমুখী ও সমতাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে।”
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “নির্বাচনী ইশতেহারে যেন শিক্ষা বাজেট ও পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়। আর নতুন দলের কাছ থেকে জনগণের প্রত্যাশা আরও বেশি।”